আদিম যুগ থেকে আধুনিক সভ্যতা সৃষ্টিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান দেখেছে পোষাকশিল্প। প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায় পোষাক শিল্পের নানা উপাদান।এসব উপাদানের ভেতরে সিল্ক অন্যতম। শিল্প বিপ্লবের পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত সিল্ক পোষাকশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সিল্ক কি?
সিল্কই প্রকৃতি প্রদত্ত একমাত্র সুতা (খুব সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে ফাইবার বা আঁশ) যা অবিচ্ছিন্ন। সাধারণত তুলা/কটন, হেম্প, লিনেন বা ঊল যে ফাইবারের কথাই বলা হোক সকলেরই একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে যা তুলনায় অনেক ছোট। পাঁট থেকে প্রাপ্ত ফাইবারও কিছুটা দীর্ঘ হয়ে থাকে, কিন্তু সেটাও সিল্কের তুলনায় অতি নগন্য। ঔজ্জ্বল্যের দিক থেকেও সিল্কের খ্যাতি আছে অত্যধিক। ফলে প্রকৃতি প্রদত্ত ফাইবারসমূহের মধ্যে সিল্ক সবসময় ই অন্যতম হয়ে আছে। বিভিন্ন প্রজাতির রেশম মথ বিভিন্ন মানের রেশম সুতা তৈরি করে। আমাদের দেশে যে রেশম পোকা পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম বোমবিক্র মোরি (Bombyx mori)
সিল্কের ইতিহাসঃ
চীনের কথাই ইতিহাসে বলা হয় সিল্কের উৎপত্তিস্থল হিসাবে।প্রায় নব্য প্রস্তর যুগের (New Stone Age) শেষের দিকে। সিল্কের প্রাচীন নিদর্শন থেকে জানা যায় যে এটি পাওয়া যেত চীনের ইয়াংশাও সংস্কৃতির (Yangshao Culture) সময়ে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সিল্কের প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে পাওয়া গিয়েছে সিল্কের তৈরী কাপড় যা দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে রাখা হত। কার্বং ডেটিং অনুসারে এর সময় পাওয়া গিয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬৩০ অব্দের দিকে। পরবর্তীতে শ্যাং রাজবংশের (Shang Dynasty) কবর খুঁড়ে সিল্কের আরো নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃতিঃ
চীন দীর্ঘ ৩ হাজার বছর ধরে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দের আগ পর্যন্ত সিল্কের গোপনীয়তা রক্ষা করেছিলো। তবে প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে কয়েকজন জাপানি নাগরিক চীন থেকে কিছু রেশমপোকার ডিম ও চারজন চীনা যুবতী রমণী নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং তাদের কাছ থেকে জোর করেই সিল্কের উৎপাদন পদ্ধতি শিখে নেয়। এর মধ্যে কোরিয়া তাদের নিজ দেশে সিল্কের উৎপাদনের প্রয়োজন অনুভব করলো। তাদের অবশ্যই কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ চীন থেকে সম্পূর্ণভাবে কোরিয়ায় অভিবাসী হওয়া নাগরিকদের কাছে। এরপর সিল্কের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে ভারত, জাপান এবং পারস্য (বর্তমান ইরান) পর্যন্ত।
সিল্ক উৎপাদন প্রক্রিয়াঃ
সিল্ক মূলত কয়েকটি ধাপে উৎপন্ন হয়।
১। সিল্ক রিলিং
২। বয়ন
৩। রঞ্জনবিদ্যা
সিল্ক রিলিংঃ রেশম কোকুন থেকে বের করা হয় এবং ফ্যাব্রিকের কাঁচামাল হয়ে যায়। একটি কোকুন 1000 মিটার কোকুন রেশম বের করতে পারে, এবং কিছু কোকুন এবং রেশম কাঁচা রেশমের সাথে মেশানো হবে। রেশম রশ্মির কোকুন বের করার প্রক্রিয়াটিকে বলা হচ্ছে রীলকণিকা।
বয়নঃপ্রক্রিয়াকরণের পরে, কাঁচা রেশম রুপো রঁজক তৈরি করার জন্য নির্দিষ্ট সংস্থার নিয়মগুলির সাথে বালি এবং ব্যাগের থ্রেড এবং ইন্টিগুয়েটে বিভক্ত হয়, অর্থাৎ, বয়ন প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিল্ক
দেশে রেশম সুতার উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়। সে কারণে ব্যবসায়ীদের ভরসা ছিল আমদানি করা সুতা। কিন্তু চীন ছাড়া সব দেশই রেশম সুতা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে পর্যাপ্ত রেশম সুতা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন রেশম বা সিল্ক ব্যবসায়ীরা। আবার রপ্তানিকারক দেশ চীন থেকেই মূল্য বাড়ানো ও দেশে এ সুতা আমদানিতে অধিক হারে শুল্ক দিতে হওয়ায় আমদানি করা রেশম সুতার দাম পড়ছে অনেক বেশি। রেশম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে রেশম সুতার বার্ষিক চাহিদা ৩০০ মেট্রিক টন।দেশে বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টন সুতা। চাহিদার বাকি সুতা ব্যবসায়ীরা চীন থেকে আমদানি করে থাকেন।
Writer:
Sayed Al Sadaf
National Institute of Textile Engineering And Research