যেকোনো কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য দরকার একটি সুন্দর প্ল্যানিং। সেই সাথে দরকার কিছু প্রসেস, যেগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে পারলে কাজটিকে একটি সুন্দর এবং সাফল্যমন্ডিত ফলাফল প্রদান করা সম্ভব। এটি যেমন ছোট ছোট কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি বড় বড় ফ্যাক্টরিতেও সেটি প্রযোজ্য। এই প্ল্যানিং বা প্রসেস-ই Supply Chain Management নামে বর্তমানে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যা মেনে চললে খুব সহজে অনেক পন্যের অর্ডার খুব কম সময়ের মধ্যে এবং কম খরচে পণ্য তৈরি করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
Supply Chain Management কি?
সাধারণভাবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বলতে বোঝায় পণ্য সরবরাহকে । একটি পণ্য উৎপাদন করতে হলে আমাদের কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিতে যেতে হয় এটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু আমরা একটি জিনিস কে প্রায়শই দেখেও গুরুত্ব দেই না। সেটি হলো পণ্যটি কিভাবে গ্রাহক এর কাছে এসে পৌঁছায়। Supply Chain Management এর স্বার্থকতা এইখানেই। মূলত Supply Chain Management বলতে যা বুঝানো হয়ে থাকে তা হলো কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে একটি প্রোডাক্ট তৈরি করে সেটিকে গ্রাহক এর কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সেই সাথে কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সেটি আবার গ্রাহক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে পরিকল্পনা, পণ্যের উৎস, মজুতকরণ, প্রস্তুত ও বিপণন কার্যক্রম দক্ষতা দিয়ে সময়মতো ও কম খরচে সম্পন্ন করাই হলো সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বা সরবরাহ সেকল ব্যবস্থাপনা। এমনকি বিক্রয় পরবর্তী সেবাও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের অন্তর্ভুক্ত।এর ফলে কাস্টমার ভ্যালু যেমন বাড়ানো সম্ভব তেমনি প্রতিযোগীতামূলক মার্কেটে টিকে থাকার জন্য এবং অন্যদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য Supply Chain Management একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট্র হিসেবে কাজ করে।
Supply Chain Management এর ইতিহাসঃ
১৯৮২ সালে, Booz Allen Hamilton এর পরামর্শদাতা কিথ অলিভার Financial Times এ র সাথে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে “Supply Chain Management” শব্দটি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছিলেন।এরপর ১৯৮৩ সালে জার্মানির একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা “ওয়ার্টশ্যাফটস ওয়াচ” প্রথমবারের মতো ওল্ফগাং পার্টসের নেতৃত্বে ” Supply Chain Management Project” নামক শিরোনামে একটি লিখা প্রকাশ করা হয় যেখানে তথাকথিত Supply Chain Management এর ফলাফল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ এক দশকেরও বেশি সময় পরে, ” Supply Chain Management ” বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা শুরু করেছিল যখন এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের আর্টিকেল এবং কিছু বই পাবলিশ করা হয়েছিল। Supply Chain কে তখন মূলত কাঁচামাল থেকে শুরু করে ব্যবহারকারী পর্যন্ত পৌঁছানো এবং সেই এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।
১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে, “Supply Chain Management” (SCM) সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করে এবং বিভিন্ন কোম্পানির অপারেশন ম্যানেজাররা তাদের কর্মক্ষেত্রে এই Supply Chain Management কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু করে।
Supply Chain Management এর ধাপ সমূহঃ
Supply Chain কে সুন্দর এবং সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু কিছু ধাপ মেনে চলতে হয়।নিচে এই গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
Planning:
Supply Chain Management এর প্রথম ধাপটি Planning নামে পরিচিত। এই ধাপে আসলে গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।সহজ ভাষায় একটি পণ্য তৈরি করা হবে কিন্তু সেটির কি চাহিদা আছে কি না বা গ্রাহক সেই পণ্যটি গ্রহণ করবে কি না এই বিষয়গুলোই Planning এ আলোচনা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া যেই সেবাটি গ্রাহককে দেওয়া হবে সেটি গ্রাহক এর উপযোগী কি না বা সেই সেবাটি গ্রাহকের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটিও এই ধাপে আলোচনা করা হয়ে থাকে।
Sourcing:
এই ধাপটি Develop নামেও পরিচিত। এইধাপে আসলে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ করা হয়। কোনো কোম্পানি কোনো একটি প্রোডাক্ট তৈরি করবে কিন্তু প্রোডাক্টটির কাঁচামাল কোথা থেকে আনা হবে,প্রোডাক্টি তৈরির পর কোন মাধ্যমে তা গ্রাহক এর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে,গ্রাহক পেমেন্ট করবে কোন মাধ্যমে এছাড়া আরও যাবতীয় জিনিস এর ক্ষেত্রে কি করা হবে এবং কাজ গুলো সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য কোন মাধ্যমের সাহায্য নিতে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ এই ধাপে করা হয়।
Manufacturing:
এই ধাপে পণ্য তৈরির কাজ করা হয়। কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন, পন্যের মান পরীক্ষা, পেকেজিং এবং ডেলিভারির জন্য যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয়ে থাকে।
Delivery and Logistics:
এই ক্ষেত্রে প্রোডাক্টটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।
Returning:
এটি হলো Supply Chain Management এর শেষ ধাপ। এইক্ষেত্রে গ্রাহক যদি প্রোডাক্টটি নিয়ে কোনো ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে তাইলে ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানী সেটির বদলে আরেকটি প্রোডাক্ট গ্রাহককে দিয়ে থাকে।
Supply Chain Management এর গুরুত্বঃ
১/বর্তমানে প্রতিযোগীতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটির প্রয়োজন সেটি হলো নিজের গ্রাহকদের ধরে রাখা। এর জন্য যেটি করতে হবে সুলভ মূল্যে ভালো মানের পণ্য দিতে হবে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে কোনো ভালো জিনিসের তৈরির খরচও বেশি । তাই কম দামে ভালো মানের জিনিস দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো অন্যান্য আনুষাংগিক খরচ কমানো। এই ক্ষেত্রে Supply Chain Management এর সাহায্য নিলে খুব সহজে তা কমানো যায়।
২/ উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
৩/ পন্যের মান বৃদ্ধি করা যায়।
৪/ অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
৫/গ্রাহকের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
বাংলাদেশে Supply Chain Management নিয়ে সম্ভাবনাঃ
দক্ষ পেশাজীবী হতে চাইলে সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে। এজন্য জানতে হবে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো। সে অনুযায়ী অনুশীলন করতে হবে। এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমারও দরকার। কেননা, আধুনিক বিশ্বের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে ওসব কোর্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সাপ্লাই চেইনে দক্ষ জনবল তৈরিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক দেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের দি চার্টার্ড ইন্সটিউিট অব প্রকিউরমেন্ট এন্ড সাপ্লাই (সিআইপিএস) ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেন এডুকেশন এলায়েন্স (আইএসসিইএ)-এর সিএসসিএম (সার্টিফাইড সাপ্লাই চেন ম্যানেজার), দেশের মধ্যে- মাইন্ড মেপারস, ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (বিআইএইচআরএম), বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) সাপ্লাই চেইনে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এ বিষয়ে ট্রেনিং কোর্স করাচ্ছে। এছাড়ার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাপ্লাই চেইনের উপরের বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স ও সেমিনার আয়োজন করে থাকে।
Source:
https://www.ibm.com/topics/supply-chain-management
cscmp.org
https://abdullahalroman.blogspot.com/
Writers Information:
Omar Saif
Department of Textile Engineering(3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology