‘SWOT Analysis’ শব্দটির সাথে আমরা বিশেষ ভাবে পরিচিত না হলেও বিজনেস স্টাডি এর প্রানভ্রমরা হলো এই ওয়ার্ডটি। মূলত ‘SWOT’ শব্দটি দ্বারা যথাক্রমে Strength, Weakness,Opportunity এবং Threat শব্দগুলোকে বোঝায়। এখন নিশ্চয়ই কিছুটা সহজ এবং পরিচিত মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশের রেডিমেড টেক্সটাইল অনেক দূর এগিয়ে গেলেও রয়েছে কিছু দূর্বলতা, হুমকি আবার সেই সাথে আছে অনেক অপার সম্ভবনা।সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আজকের এই লিখায়,বর্তমানে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির অবস্থান বিবেচনা করে এর ‘SWOT Analysis’ এর খন্ডচিত্র তুলে ধরা হলো।
Strengths:বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মূল শক্তি হলো ইতিমধ্যেই আমরা সারাবিশ্বে একটা ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ তৈরী করেছি।সেই সাথে পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ আমেরিকাতেও আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এর পদার্পণ খুবই স্বচ্চ।এদেশের ফ্যাশন ডিজাইনিং সেক্টর তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করছে দৃষ্টনন্দন পোশাক,যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে।কাস্টমার সেগমেন্টেশনে এগিয়ে করেছে,নবজাতক থেকে বৃদ্ধা কিংবা ছেলে-মেয়ে,নারী-পুরুষ সবার জন্যই কাপড় তৈরী করে এদেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো।প্রডাকশন সেক্টরে করেছে সু ব্যবস্থা,উন্নতি যন্ত্রপাতি এবং প্রচুর জনবল থাকায় সহজেই অর্ডার নিচ্ছে এবং তা যথাযথ ভাবে তৈরী করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বাইরে। অন্যদিকে এদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির রয়েছে যথেষ্ট মিডিয়া কভারেজ ফলে অনলাইনের মাধ্যমে দেশের এই সেক্টরে নতুন কিছু আবিষ্কার বা ভিন্ন কিছু সৃষ্টি হলেই সবাই খুব দ্রুতই তা জানতে পারছে।বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন,জামদানী, বেনারশী এবং কাতান এই সব ফ্রেবিক এর চাহিদা প্রচুর যার ফলে এখনো এই ফ্রেবিক তৈরি হয় বিপুল পরিমানে এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। মসলিন এর ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও এই বছর ২০২১ সালে আবারো পুনঃআবির্ভাব ঘটেছে। ঈদ-পূজা,নববর্ষ-ফাল্গুনকে কেন্দ্র করেও এদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এক বিশাল অংকের লাভ করছে।
Weaknesses: অসংখ্য পজিটিভ দিক থাকার পরেও কিছু দূর্বলতা আছে,যেগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু সমস্যা হলো দক্ষ জনবলের অভাব।অনেকেই আছে যারা হাতে কলমে কাজে অনেকটাই অপটু, এক্ষেত্রে আমাদের পোশাক এর কোয়ালিটি কমে যায়, যার ফলে বায়াররা সন্তুষ্টি হয়না।সেই সাথে ‘সেফটি’ অনেক বড় একটা সমস্যা আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরে।এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেফটি নেই,যেকোনো সময় আগুন ধরে যাওয়া,পুরাতন এসি বা মেশিনারিজ থেকে দূর্ঘটনার কথা শোনা যায়।ফলে অনেক শ্রমিক মারা যায়। কিছু সংকটও রয়েছে যার ফলে ইন্ডাস্ট্রির প্রোডাকশনে ব্যাঘাত ঘটে। ইতিমধ্যে দেশের ৪০% ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।এমনকি অনেক জায়গায় পানির সঠিক ব্যাবস্থা নাই।এই রকম বেশ কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি। এই সব কিছুর উর্ধ্বে আরো একটা মেজর দূর্বলতা হলো ‘বৈচিত্রতার অভাব’।এ দেশের ৮০% ইন্ডাস্ট্রি শুরুতে যেই ধরনের গার্মেন্টস তৈরী শুরু করে সেটা নিয়েই দীর্ঘদিন কাজ করে চলে। সচারাচর ভিন্নতা আনে না।একটা প্রোডাক্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পন্থার প্রোডাক্ট একই ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরী হচ্ছে না।ফলে বায়ায়রা পাচ্ছে না ভিন্ন কিছু,ক্রেতাদের চাহিদাও কমছে।
Opportunities: ভালো-মন্দ তো সব কিছুর রয়েছে।সেই সাথে রয়েছে ‘সুযোগ’। কথায় যেমন বলে সুযোগের হাত ছাড়া করতে নেই। ঠিক তেমনি এই গার্মেন্টস সেক্টরেও রয়েছে অসংখ্য সুযোগ। কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না অনেকাংশেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে আবারো তার পুরাতন পজিশন ‘Second Largest Readymade Garments Exporter’ খেতাব এবং এটা সম্ভব হয়েছে সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগ ব্যবহার করার মাধ্যমেই।কিন্তু এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে এ দেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।
প্রথমেই যে ব্যপারে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন তা হলো বিদেশি মার্কেটে বিস্তার লাভ করা।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইউরোপ আর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করছে।এই বাইরে লন্ডন, জাপান,ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির হার অনেক কম। প্রথমেই বৃদ্ধি করতে হবে আরো ভিন্ন ভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি।
এরপর আরেকটা মুখ্য বিষয় হলো বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুল পরিমানে পোশাক রপ্তানি করে থাকলেও প্রোফিট মার্জিন বৃদ্ধি হচ্ছে না।যার ফলে বছরের পর বছর ধরে আমার পোশাক রপ্তানি করে আসলেও খুবই সীমিত একটা লাভ অর্জন করছি।প্রোটিন মার্জিন বৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া করা এই শিল্পের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
Threats: SWOT Analysis এর সর্বশেষ ধাপটি হলো ‘Threat’। Threat শব্দটির মাধ্যমে বোঝানো হয়ে থাকে কি কি ক্ষতি বা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
এই দিকটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।কারণ Strength আর Weakness এর উপর নির্ভর করেই Threat কে সামাল দিতে হয়। আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন রয়েছে অনেক Strength এবং Weakness,তাই Threat অংশটিও বিশেষ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ এই ইন্ডাস্ট্রিতে।
মার্কেট এনালাইসিস ছাড়াই প্রোডাকশন করা এসময়ে এসে সবচেয়ে বড় সমস্যা। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে পলিটিকাল হস্তক্ষেপ এবং শ্রমিক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার অভাব হলো আরেকটি ক্ষতির কারণ। এর পাশাপাশি এ দেশের ইন্ডাস্ট্রি HR, IT,Inventory Control এর অনুপযুক্ত প্ল্যানিং, ফলো আপ এবং বাস্তবায়নে সামঞ্জস্যতার অভাব বয়ে আনতে পারে বিরাট ক্ষতি।
এই চারের সমন্বয়ে বাংলাদেশের রেডিমেড টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে পারবে। বাংলাদেশের সেই সম্ভবনা আছে এবং আগামী দিন গুলোয় আমরা উন্নতির বাস্তব প্রতিফলন দেখবো আশা করি। সর্বোপরি এই সেক্টরের সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষ যদি তার নিজ নিজ অবস্থা থেকে এগিয়ে আসে তবেই উন্নতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে ‘Made In Bangladesh’ ট্যাগটি।
Source: Class Note, ResearchGate,SCRIBD
Writer’s Information
Nure Arfi
Second Year, Second Semester
Ahsanullah University of Science and Technology