২০৩০ সালের ‘টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি’ কেমন হবে? কি ভাবছেন সেটা জানার জন্য ‘ডোরেমনের টাইম মেশিন’ গ্যাজেট লাগবে, নাকি হারিয়ে গেলেন ‘রিলেটিভিটি’ এর সূত্রে। অঙ্ক কষে বয়স বাড়িয়ে ২০৩০ এর টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে আসতে হবে না,কারণ সেই জন্যই UK এর ‘WRAP’ নামের একটা চ্যারিটি তৈরি করেছে ‘Textiles 2030: UK Sustainable Textile Action Plan’। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ইউনাইটেড কিংডম এর এই সাসটেইনেবল চ্যারিটি প্রথম এই ‘Textile 2030 Roadmap’ উন্মুক্ত করে।
‘Textile 2030 Roadmap’ হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম প্রনয়ণ করা ১০ বছরের একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার নীল নকশা আমাদের এই টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০২১ এর ২৬ এপ্রিল ছিল এটার পথ চলার শুরু। WRAP এই ‘Roadmap’ টি গত ২৬ শে এপ্রিল উদ্ধোধন করেন। ইতিমধ্যে ‘WRAP’ ১০ টি ব্র্যান্ড, রিটেইলার,২০ টি রিসাইকেলিং অর্গানাইজেশন এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।বিশ্বের সেরা এবং নামকরা কিছু ব্র্যান্ড এর পাশাপাশি Dunelm, John Lewis, M&S, Next, Primark, Sainsbury’s, Ted Baker, Tesco and The Salvation Army ও এই যুক্তিতে আবদ্ধ।
এবার আসা যাক এই ‘Roadmap’ এর মূল মন্ত্র কি, কেনই বা এতো দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প করার চিন্তা করা হলো। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আমাদের পরিবেশের উপর যে প্রভাব ফেলেছে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে হ্রাস করার জন্যই এই প্রকল্প।সকল টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি কে একই চেইন এর মধ্যে এনে এই পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করাই ‘WRAP’ এর উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়,এর সাথে আরো কিছু বিশেষ পরিকল্পনা ও আছে এই উদ্যোগ এর। পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি দূষিত হয় এবং কার্বন নির্গত হয়, তা নিতান্তই আমাদের মানবজীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ।
অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হওয়ার কারনে পৃথিবীর ওজোন স্তর পাতলা হয়ে গেছে,বিষাক্ত গ্যাস কোনো বাধা না পেয়ে সহজেই বায়ূমন্ডলে চলে আসছে। এর ফলে পৃথিবীবাসি ক্যান্সার সহ আরো অনেক কঠিন রোগের সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে এই কারণেই গলতে শুরু করেছে অ্যান্টার্কটিকা এবং হিমালয় এর বরফ। তাই ‘WRAP’ এর উদ্যোগ এর অন্যতম মেজর একটি অংশ হলো পানি এবং কার্বন এর ব্যবহার কমানো এবং দূষিত পানি এবং নির্গত কার্বন এর পরিমান নিম্ন পর্যায়ে এনে একটি মাইকফলক স্পর্শ করা।
‘Make’, ‘Use’, ‘Dispose’ এই তিনটি জিনিসের উপর ভিত্তি করেই এই প্রকল্পটি আগাবে। ইউনাইটেড কিংডম চাচ্ছে আগামী দশ বছর এই দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি যেই পোশাক তৈরি করবে তা যাতে সাসটেইনেবল হয়, এবং ব্যাবহার করার পর যা রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে নতুন জিনিস বা অন্য কোনো কাজে ব্যাবহার করা হয়।
বর্তমানে এক জরিপে দেখা যায়,ক্রেতাদের পছন্দ হলো সেই সব ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট যারা তাদের প্রোডাক্টে সাসটেইনেবল কে গুরুত্ব দিচ্ছে, অন্যদিকে গার্মেন্টস এ যে সব ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইনভেস্ট করছে তারা প্রমাণ ও চাচ্ছে যে প্রোডাক্ট এর আবর্জনায় যাতে পরিবেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন না ঘটে,দেশের সরকারও ঠিক একই ভাবে চাচ্ছে ইকো ফ্রেন্ডলি প্রডাকশন। এই সব কিছুকে একত্র করে ‘WRAP’ এর মহান অগ্রসর।
মূলত তিনটি মূল বিষয়কে প্রধান্য দিয়েই ইউনাইটেড কিংডম আগামী দশ বছর তাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি কে পরিচালনা করবে তথা:
১) প্রোডাক্ট যাতে দেখতে সুন্দর হয়, দীর্ঘ দিন ব্যবহার করা যায় এবং অবশ্যই তা রিসাইকেল করা যায় ২) দেশব্যাপী রি-ইউজ বিজনেস এর প্রসার ঘটানো,যেমন: রি-কমার্স,রেন্টাল, সাবক্রিপশন ইত্যাদি
৩) রি সাইকেল ফাইবার নতুন প্রোডাক্ট এ ব্যাবহার এর প্রচলন। আমরা সকলেই অবগত আছি,বাংলাদেশ একটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি নির্ভরশীল দেশ। ইউনাইটেড কিংডম এর তুলনায় আমদের এ দেশে প্রতি মূহুর্তে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি দ্বারা অনেক বেশি দূষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি যাতে আজ থেকে ১০ বছর পর বিপর্যয় এর পর্যায়ে না চলে যায় সেই বিষয়ে এখনি সচেতন হতে হবে। ইউনাইটেড কিংডম এর মত এমন প্রকল্প যদি আমাদের দেশে প্রনয়ণ করা সম্ভব হয় তবে আমরাও একটা সুন্দর পরিবেশ পাবো। আমাদের দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০% যেহেতু টেক্সটাইল এর উপর নির্ভরশীল তাই আমাদের দেশের মানুষের জীবিকার চাকা সচল রাখতে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এর কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে হবে, আবার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে শুধু প্রানী বিলুপ্তর সাথে সাথে এই মানুষ জাতিও বিলুপ্ত হতে বেশি সময় লাগবে না।
পরিশেষে, আজ থেকে দশ বছর পর একটা সুন্দর এবং উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘WRAP’ এর এই প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন শুধু ইউনাইটেড কিংডম নয় বরং পৃথীবির সকল দেশে অনুসরণ করা অতীব জরুরি।
Source: wrap.org.uk
Writer’s Information:
Name: Nure Arfi
Semester: Second Year, First Semester
Batch: 39
Ahsanullah University Of Science and Technology