হেম্প নাম টা শুনলে অনেকেই হয়তো আড়চোখে তাকাবেন। অনেকে হয়তো বুঝবেন না কিসের ক্থা বলা হচ্ছে তাই চলে যাবেন গুগলে সার্চ করতে যে জিনিস টা কি। কিন্তু যখন জানতে পারবেন হেম্প এর রহস্য তখন ভাববেন এই নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে টেক্সটাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট এ লিখা কেনো? তাহলে এখন আপনারা এই হেম্প কে অন্য ভাবে চিনতে যাচ্ছেন,যেটা হয়ত কেউ কখনো কল্পনাও করেননি।হেম্প কে হয়ত এতক্ষণে চিনে গিয়েছেন। এই হেম্প কে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে মেডিকেল সেক্টরে এর গুরুত্ব প্রমানিত হয়েছে যখন এই হেম্প গাছ এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে।কিন্তু এই হেম্প গাছ থেকে প্রাপ্ত হেম্প ফাইবার টেক্সটাইল শিল্পে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।হেম্প ফাইবার হয়ে থাকে খুব শক্তিশালী এবং এটি একটি উন্নত মানের টেক্সটাইল ফাইবার।
ইতিহাসঃ প্রায় ১২০০০ বছর আগে থেকে এই হেম্প ফাইবার কে টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে।জাপানের নিকটবর্তী ওকি দ্বীপপুঞ্জের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রায় ৮০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে Hemp Achenes ছিল । প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে হেম্প এর ব্যবহার চীনের নিওলিথিক যুগের সাথে সম্পর্কিত, ৫ম সহস্রাব্দ থেকে ইয়াংশাও সংস্কৃতির মৃৎশিল্পে হেম্প ফাইবার এর ছাপ পাওয়া গেছে। চীনারা পরে জামা, জুতো, দড়ি এবং কাগজের একটি প্রাথমিক রূপ তৈরি করতে হেম্প ব্যবহার করত । টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ওয়েল্যান্ড বারবার এর মতে “ইউরোপ (জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, ইউক্রেন) থেকে পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত (তিব্বত এবং চীন), সমগ্র উত্তর অক্ষাংশ জুড়ে নওলিথিক যুগে হেম্প এর চাষ বৃদ্ধি পেয়েছিল।”
ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় শতাব্দীতে বসবাসকারী ইহুদিরা হেম্প চাষের সাথে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ইউরোপে প্রধানত হেম্প এর চাষ করা হত ক্রিস্টোফার কলম্বাস সহ অনেকের জাহাজের দড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হত। স্পেনীয়রা আমেরিকাতে হেম্প নিয়ে এসেছিল এবং এটি চিলিতে প্রায় ১৫৪৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। পেরু, কলম্বিয়া এবং মেক্সিকোতে একই রকম চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে কেবল চিলিতেই এই শস্য সাফল্য পেয়েছিল। ১৬০৫ সালের জুলাইয়ে, স্যামুয়েল চ্যাম্পলাইন কেপ কডের লোকেরা ঘাস এবং হেম্প এর পোশাক ব্যবহার করার কথা জানিয়েছিল এবং তারা বলেছিল যে তাদের অঞ্চলে হেম্প গাছের উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। ১৬০৭ সালের মে মাসে, ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে অবস্থিত মূল পোহাতান গ্রামে স্থানীয়দের দ্বারা চাষ করা ফসলগুলির মধ্যে হেম্প ছিল, এবং ১৬১২ সালে সামুয়েল আরগাল বন্য রিপোর্ট করেছিলেন উপরের পোটোম্যাকের তীরে হেম্প এর বৃদ্ধি ইংল্যান্ডের চেয়ে ভাল। পিউরিটিয়ানরা প্রথম ইংল্যান্ডে ১৬৪৫ সালে হেম্প চাষ করেছিলেন বলে জানা যায়।
হেম্প ফাইবারের গাঠনিক বৈশিষ্ট্যঃ
Colour: হলুদ,গাঢ় বাদামি বা এর কাছাকাছিlength(mm): ১৫-২০
Diameter(um): ২২-২৫
Fitness(tex): ০.২৫-০.৫২
Specific Weight(gm/cm3): ১.৪৭
Tensile Strength(N tex-1): ০.৫৩-০.৬২
Breaking Elongation(%): ৩-৪
হেম্প ফাইবার এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
Alpha-cellulose: ৬২-৬৭%
Hemicellulose: ৮-১৫%
Lignin: ৪%
Ash: ৫%
Wax: ১%
হেম্প ফাইবারের সুবিধা এবং উপকারিতাঃ
•হেম্প চাষ এবং প্রয়োগের উভয় ক্ষেত্রেই অন্যান্য প্রাকৃতিক ফাইবারগুলির তুলনায় উন্নতমানের হয়ে থাকে।
•হেম্প চাষে তুলার তুলনায় কম উপাদান এবং কম পানির প্রয়োজন।
•শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হেম্প পোকামাকড় এবং রোগ প্রতিরোধী যার ফলে এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
•কম লিগনিন স্তরগুলি ক্লোরিন ছাড়াই ব্লিচ করা যায়,যার ফলে এটি পরিবেশ বান্ধব।
•একই পরিমাণ জমি ব্যবহার করে তুলার চেয়ে বেশি পরিমানে হেম্প ফাইবার সংগ্রহ করা যায়।
•এটি অন্যতম শক্তিশালী প্রাকৃতিক তন্তু।
•এটি কম প্রসারিত হয়, তাই পোশাক তার আকৃতি ধরে রাখে।
•হেম্প ফাইবার থেকে উৎপন্ন কাপড়ের কোমলতা এর ব্যবহারের সাথে বৃদ্ধি পায়।
•এটি তুলোর চেয়ে ভালোভাবে রঙ ধরে রফাখতে পারে।যার ফলে পোশাক এর রঙ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম•এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যুক্ত।
•উচ্চ ঘর্ষণ প্রতিরোধী।
•ছাঁচ এবং জীবাণু প্রতিরোধী।
•এর সুপরিয়র UV ব্লক করা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
হেম ফাইবারের ব্যবহারঃ
মোটা হেম্প ফাইবার এবং সুতা কর্ডেজ,দড়ি,স্যাকিং এবং ভারী-ডিউটি টারপলিনগুলি বোনাতে ব্যবহার করা হয়। ইতালিতে সূক্ষ্ম হেম্প ফাইবারগুলি অভ্যন্তর নকশা এবং পোশাকের জন্য ব্যবহৃত হয়। হেম্প টেপস্ট্রি, টুপি, শাল এবং তোয়ালে তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।হাঙ্গেরিতে যে হেম্প ফাইবার উৎপন্ন হয় তা দিয়ে রঙ্গিন গালিচা বুনন, ক্রোশেট এবং অন্যান্য নৈপুণ্যের আইটেমগুলির জন্য উপযুক্ত। দেখা গেছে যে ৩ প্লাইস,৬ প্লাইস এবং১২ টি প্লাইগুলি ওয়েভিং(weaving),নিটিং(knitting) বা ক্রোশেটের জন্য ব্যবহৃত হয়। হেম্প ফাইবার লিনেন এবং পাটের আঁশ এর চেয়ে শক্তিশালী। তাই এটি সুতা, দড়ি, গালিচা, ক্যানভাস, শিপ কর্ডেজ, চট ইত্যাদি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। ম্যানিলা “হেম্প” অ্যাবাকা গাছের পাতা থেকে প্রাপ্ত একটি ফাইবার; এটি খুব শক্তিশালী, সূক্ষ্ম, সাদা, চিকন এবং যদিও ভঙ্গুর, এটি মোটা কাপড়ের বুননের জন্য উপযুক্ত।
এই হেম্প ফাইবার টেক্সটাইল শিল্পের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।এর অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং নানাবিধ ব্যবহার একে শিল্পক্ষেত্রে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায় । কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যবহার তেমন ভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু এই হেম্প উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ এর আবহাওয়া খুবই উপযুক্ত। তাই ধারণা করা যায় বাণিজ্যিক ভাবে বাংলাদেশ এর টেক্সটাইল শিল্পে এই হেম্প ফাইবার ব্যবহার শুরু হলে এটি খুব লাভজনক প্রমানিত হবে এবং ক্রেতাদের কাছে খুব সমাদৃত হবে
Source: www.hempgazette.com
www.sciencedirect.com
www.worldjute.com
www.textiletoday.com
Writer:Omar Saif
Department of Textile Engineering(3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology