সাধারণত ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিক বলতে যে সকল ফেব্রিক সম্পূর্ণভাবে পানিরোধী তাদেরকে বুঝায়। অর্থাৎ ফেব্রিকগুলো পানি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এসকল কাপড় কোন অবস্থাতেই পানিতে ভিজেনা। স্বাভাবিকভাবেই নিটেড ও ওভেন ফেব্রিকে অনেকগুলো ছিদ্র থাকে যাদের মধ্যে পানির কণাগুলো প্রবেশ করে এবং প্রবেশের ফলে ফেব্রিকটি ভিজে যায়। বিভিন্ন রাসায়নিক সংমিশ্রণ ব্যবহার করে ফেব্রিকের সেই ছিদ্র গুলোকে বন্ধ করা হয়ে থাকে।
ফেব্রিককে ওয়াটারপ্রুফ হিসেবে রূপান্তর করার পদ্ধতি :
নিটেড এবং ওভেন ফেব্রিকের এই ছিদ্রগুলোকে যদি কোনভাবে বন্ধ করে দেওয়া যায় তবেই ফেব্রিককে পানিতে আদ্র হওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে। অবশ্যই ছিদ্রগুলোকে কোন পানি বিকর্ষী পদার্থ দ্বারাই ভরাট করতে হবে ।এ কাজের জন্য সাধারণত রাবার লেটেক্স,ক্লোরিনেটেড রাবার অথবা তিসি বীজের মত পদার্থ গুলোকে ব্যবহার করা হয় । এগুলো দিয়ে ফেব্রিকের উপরিতলে কোটিং বা প্রলেপ দেয়া হয় । ফলে ফেব্রিকের অভ্যন্তরে অবস্থানরত warp ও weft সুতার মধ্যকার ফাকা স্থানগুলো প্রলেপ দেয়া পদার্থে পূর্ণ হয়ে যায়। এভাবে ফেব্রিক যে শুধু পানি প্রতিরোধ করতে পারবে তা নয়, সাথে বায়ুকেও প্রতিরোধ করবে । তাই এই কাপড় পরলে পরিধানকারী সামান্য অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন । ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিকের মাঝে রেইন কোর্ট,ছাতার কাপড় , ত্রিপল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ওয়াটার রিপেলেন্ট ফেব্রিক:
ফেব্রিকের যে ধর্মের কারনে ফেব্রিকটি পানি দ্বারা সিক্ত হতে পারেনা সেটিই ওয়াটার রিপেলেন্সি।ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিকে ছিদ্রগুলো বন্ধ থাকলেও এক্ষেত্রে ছিদ্রগুলো উন্মুক্তই থেকে যায়। তাই এর মধ্যদিয়ে জলীয়বাষ্প যাওয়া আসা করতে পারে। কোনো কাপড়ের উপর কয়েক ফোটা পানি ঢেলে দিলে যদি দেখা যায় পানির ফোটা কাপড়ে ছড়িয়ে পড়েনি এবং ফোটাটির আগের আকার নিয়েই ফেব্রিকের উপর স্থির থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি ওয়াটার রিপেলেন্ট ফেব্রিক। তবে, এভাবে ক্রমাগত পানি ঢাললে এবং উচ্চবায়ুচাপে এই ফেব্রিকে পানি প্রবেশ করতে পারে। এবং সেটি ভিজে যেতে পারে।
ফেব্রিককে ওয়াটার রিপেলেন্ট হিসেবে রূপান্তর করার পদ্ধতি :
ছিদ্র গুলো উন্মুক্ত থাকার ফলে ফেব্রিকের অভ্যন্তরীণ গঠনে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না । তাই যেকোন টেক্সটাইল কাপড়েই ওয়াটার রিপেলেন্ট ফিনিশিং করা যেতে পারে। ফেব্রিক কে ওয়াটার রিপেলেঞ্চি করতে বিভিন্ন মেটালিক সোপ ব্যাবহার করা হয় । যেমন স্টিয়ারেট লবন (স্টিয়ারক্সি মিথাইল পাইরিডিন ক্লোরাইড), মেলামাইন যুক্ত ইমালশন জাতীয় পদার্থ । যে পদ্ধতিতে এগুলো প্রয়োগ করা হয় তাকে প্যাড ড্রাই বা কিওর টেকনিক বলা হয় । উল্লিখিত ট্রিটমেন্টের পরে ফেব্রিকের উপড়ে একটি উচ্চ পানি বিকর্ষী পর্দার সৃষ্টি হয় , যা ফেব্রিক কে সিক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে ।
বহুল ব্যবহৃত কিছু ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিক:
১. PUL: এর পূর্ণরূপ Polyurethane Laminate বা পলি ইউরিথেন ল্যামিনেট। এটি সম্পূর্ণ পানিরোধী এবং স্থিতিশীল পলিয়েস্টার ফেব্রিক দ্বারা গঠিত। এর পরিধেয় পার্শ্ব অত্যন্ত মোলায়েম এবং আরামদায়ক।
২. TPU: Thermoplastic Polyurethane বা TPU ব্যবহৃত হয়ে PUL এর পরিবর্তে। PUL এর চেয়ে এটি বেশ মোলায়েম এবং পরিবেশবান্ধব। তবে এটি কম মজবুত।
৩. Nylon and Polyester: এধরনের দ্রব্যাদি প্রকৃতপক্ষে ওয়াটারপ্রুফ নয় কিন্তু এদের পানিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।তবে বিশেষায়িত আস্তরণ প্রদানের মাধ্যমে এরা ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিকের গুনাবলী লাভ করে। এরা খুব বেশি শক্তিশালী হয় না।
৪. Nylon Taffeta: এক বিশেষ ধরনের আস্তরন ব্যবহারের মাধ্যমে নাইলন ট্যাফেটা পানিরোধী বৈশিষ্ট্য ধারন করে। এরা উজ্জ্বলতা প্রদর্শন করে। ছাতা তৈরীতে এসকল ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
৫. PVC coated Polyester: পলিভিনাইল ক্লোরাইডের এক বিশেষ ধরনের প্রলেপ ব্যাবহার করা হয় এই ফাইবার তৈরীতে।ফাইবারটি শতভাগ ওয়াটারপ্রুফ বৈশিষ্ট প্রদান করে।
৬. Oilcloths: এটি আমেরিকান ক্লোথ নামেও পরিচিত। ফেব্রিকটি বেশ শক্ত, টেকসই এবং সহযে পরিষ্কারযোগ্য। টেবিলক্লোথ, লাগেজ, ত্রিপল ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
৭. Wool: এটি স্বভাবতই পানিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদান করলেও সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ নয়। “Lanolin” এর প্রলেপ ব্যবহার করে এটিকে ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিকের গুণাবলী প্রদান করে। এছাড়াও, অত্যধিক গরম পানিতে বয়েল করে এটিকে ওয়াটারপ্রুফ হিসেবে রূপান্তর করা হয়।
ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিক ব্যবহার করে যেসকল পরিধেয় এবং ব্যবহার্য বস্তু তৈরী করা হয়:
Raincoats
Jackets
Anoraks
Cagoules
Outdoor Wear
Ski Wear
Sportswear
Footwear
Bags
Rucksacks
Luggage
Aprons
Protective Clothing
Umbrellas
Hats
Tents
সর্বোপরি, বিভিন্ন সুবিধার ফলে ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিক আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি টেক্সটাইল এরই অবদান। দিনে দিনে টেক্সটাইলের ব্যাপকতা এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিকের সাথে সম্পর্কিত এমন কিছু কিছু ফেব্রিকও তৈরী হচ্ছে যেগুলো থেকে তৈরী পোষাক শরীরে থাকা অবস্থায় ভিজে গেলেও শরীরের তাপেই সাথে সাথে শুকিয়ে যাবে। অনুধাবন করতেই ভাল লাগে যে এগুলো টেকনিক্যাল টেক্সটাইল এর অবদান।
তথ্যসূত্র : গুগল,উইকিপিডিয়া, টেক্সটাইল ম্যানিয়া।
Writer information:
Md Rashid
Dept of Fabric Engineering
1st Batch
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College,Pirganj, Rangpur.